ডিওএইচএস’র ই-কমার্স ব্যবসার আড়ালে এমএলএম ব্যবসা

বর্তমানে বাংলাদেশের যে কয়টি সম্ভাবনাময় ব্যবসা খ্যাত রয়েছে তার মধ্যে ই-কমার্স উল্লেখ্য। আর আড়ালেই অবৈধভাবে এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং) ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে নোভেরা প্রোডাক্টস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি।
ভুক্তভোগীদের সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকে মিরপুর ডিওএইচএস একটি বাসা ভাড়া নিয়ে অবৈধভাবে এমএলএম চালাচ্ছে নোভেরা প্রোডাক্টস লিমিটেড। বিনিয়োগের নামে তিন বছরে হাতিয়ে নিয়েছে ৪৩ কোটি ৫২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৫ টাকা।
এবিষয়ে বরিশাল বানাড়িপাড়ার বাসিন্দা এফ আই মানিক জানান, শুরুতে বিনিয়োগে আগ্রহীদের বিভিন্ন ধরনের লোভ দেখিয়ে টাকা নেয় এরা। মূলত তারা আমাকে বলে ছিলেন ই-কমার্স বা সরাসরি মার্কেটিংয়ের প্রতিষ্ঠান। এখানে বিনিয়োগ করলে প্রোডাক্টস, কমিশন ও মাসিক বেতন দেওয়া হবে।
কিন্তু বিনিয়োগকারার প্রায় তিন বছর পরেও কোনও টাকা বা কমিশন ফেরত পাননি। উল্টো টাকা চাইতে গেলে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাদের বের করে দেওয়া হয়।
আমার মত মানিক ছাড়াও মো. মনির হোসেন ৯ লাখ ৫০ হাজার, মো. ইয়াকুব ইসলাম সুমন ১১ লাখ, মো. জাহিদ মিয়া (৪০) ৭ লাখ, মো. সম্রাট রেজা রবিন (২৮) ৬ লাখ, মো. শাহিন (৪০) সাত লাখ, মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৩৮) ৪ লাখ, ইফতেখার আহম্মেদ সুমন ১০ লাখ, আসাদুজ্জামান আসাদ (৩৮) ৬ লাখ, মো. সিফাতুল্লাহ সালেহী (৩০) সাড়ে ৩ লাখ, মো. তাজুল ইসলাম (৫৫) ১২ লাখ, হামিম আহসান (৩০) ২ লাখ, মো. শহিদুল ইসলাম লাইস (৩৮) ২ লাখ ও মো. রাজু আহম্মেদ (৩৫) ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তাদেরও একই অবস্থা।
উল্লেখিত ব্যক্তিরা ছাড়াও প্রায় এক লাখ লোকের কাছ থেকে কমবেশি বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে পল্লবী থানায় গত ২৩ এপ্রিল মামলা দায়ের করেন এফ আই মানিক। পরবর্তীতে মামলাটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান ডিবি সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগ।
মামলার আসামিরা হলেন- নোভেরা প্রডাক্টস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. কামরুল ইসলাম (৪৫), ভাইস চেয়ারম্যান শামিমুল ইসলাম (৫৫), ফিন্যান্স ডিরেক্টর মো. মশিউর রহমান খান (৪৩), ডিএমডি সাইফুল ইসলাম অরফে সোহেল (৩৭), ডিরেক্টর (মার্কেটিং) বিশ্বজিৎ গুহ (৩৬), ডিরেক্টর (প্ল্যানিং) মো. এমদাদুল হক মিলন (৩৫), পরিচালক (ক্রয়) মো. মাসুম বিল্লাহ (৫০), পরিচালক(অপারেশন্স) কাজী নাজিম উদ্দিন (৫৫), পরিচালক (বিক্রয়) এস এম আমিনুল ইসলাম অরফে খোকন(৪৫)।
অনুসন্ধান জানা যায়, প্রতারণার জন্যই নোভেরা প্রোডাক্টস লিমিটেড কোম্পানিটি চালু করে কয়েকজন। যারা বাড়তি আয়ের লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
মামলার একদিন পর ডিএমডি সাইফুল ইসলাম, ফিন্যান্স ডিরেক্টর মো. মশিউর রহমান খান, ডিরেক্টর (মার্কেটিং) বিশ্বজিৎ গুহ ও ডিরেক্টর(প্ল্যানিং) মো. এমদাদুল হক মিলনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। একই সঙ্গে মিরপুর ডিওএইচএস অফিস থেকে কম্পিউটার, তাদের ব্যবহৃত গাড়ি, বেশ কিছু নোভেরা পণ্যসহ ব্যবসা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অর্গানাইজ্ড ক্রাইম প্রিভেনশন টিমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ২০১৬ সাল থেকে নোভেরা প্রোডাক্টস লি. নামে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে ই-কমার্স ও ডাইরেক্ট মার্কেটিংয়ের আড়ালে পিরামিড আকৃতির এমএলএম ব্যবসার কথা জানিয়েছে। এই ব্যবসার মাধ্যমে অধিক লাভ এবং উচ্চ আয়ের কথা বলে হাজার হাজার লোকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছে। আসামিরা কারাগারে রয়েছে। প্রতারণায় জড়িত বাকিদের গ্রেফতার অভিযান চলছে।’