article

৪০ লাখ অভিবাসীর বাদ পড়ার আশঙ্কা

৪০-লাখ-অভিবাসীর-বাদ-পড়ার-আ

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির নতুন পরিকল্পনায় ‘পরিবার ও কর্মসংস্থান’ ভিত্তিক গ্রিনকার্ডের জন্য ব্যাকলগে অপেক্ষারত ৪০ লাখের বেশি লোকের আবেদনপত্র বাদ দেওয়া হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অভিবাসন পরিকল্পনার প্রস্তাব অনুসারে, গ্রিনকার্ড ব্যাকলগের অভিবাসীরা তাদের পুরোনো লাইন হারাবে। নতুন পয়েন্টভিত্তিক পদ্ধতির আওতায় তাদের আবেদন করতে হবে। প্রশাসনের এমন প্রস্তাবে অভিবাসীদের মধ্যে নানামুখী উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে যারা গ্রিনকার্ডের জন্য অপেক্ষা করছে, তারা অতিরিক্ত পয়েন্ট পাবে।’ তবে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো বিবরণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৬ মে দেওয়া তাঁর বক্তব্যে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বর্তমানে চলমান সব পরিবার ও কর্মসংস্থানভিত্তিক অগ্রাধিকার বিভাগগুলো বাদ দেওয়া হবে। প্রতিস্থাপিত নতুন ‘বিল্ড আমেরিকা’ ভিসা দিয়ে তা প্রতিস্থাপিত হবে। নতুন পরিকল্পনার অধীনে কোনো দেশীয় সীমা থাকবে না। এ জন্য এখন শুধু কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন। গ্রিনকার্ডের জন্য

অপেক্ষারত অভিবাসীদের পয়েন্ট পদ্ধতির আওতায় স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করতে হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবে কর্মসংস্থানভিত্তিক গ্রিনকার্ডের জন্য দীর্ঘদিন ধরে যারা অপেক্ষা করছে, তাদের কেউ কেউ দ্রুত স্থায়ী বাসস্থান সুবিধা পেতে পারে। এই পরিকল্পনাটি আইনে পরিণত করতে কংগ্রেসে প্রস্তাবটি পাস করতে হবে। তাই ধরে নেওয়া হচ্ছে, এতে আরও কিছু পরিবর্তন আসবে। এতে দেখা যায়, পারিবারিক অভিবাসন নিয়মনীতিকে বর্জন করে ব্যাকলগে অপেক্ষা করা অভিবাসীদের প্রতিরোধ করার কথা বলা হয়েছে।
ব্যবসার জন্য পয়েন্টভিত্তিক পদ্ধতির একটি প্রধান সমস্যা—যদি এটি ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ না করে তার পরিণতি হবে অপ্রত্যাশিত ও এটি ঠিক করা প্রায় অসম্ভব হবে।
আমেরিকার গ্রিনকার্ড সিস্টেম আইনটি ১৯৯০ সালে সর্বশেষ পরিবর্তন করা হয়েছিল। ১৯৯০ সালের ইমিগ্রেশন অ্যাক্টে বছরে ১ লাখ ৪০ হাজার কর্মসংস্থানভিত্তিক গ্রিনকার্ড ও ৬৫ হাজার এইচ বি-১ ভিসা সীমাবদ্ধ করা হয়।
এই ডেটা থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়, আইন প্রণেতাদের ধারণা অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হয়েছে। কারণ নীতিনির্ধারকেরা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব, স্মার্টফোন, ই-কমার্স, ক্লাউড কম্পিউটিং ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সম্পন্ন প্রযুক্তিগত উচ্চদক্ষ শ্রমের ব্যাপক চাহিদার কথা আগে এতটা অনুমান করতে পারেননি।
ব্যক্তি ও পরিবার মিলিয়ে গ্রিনকার্ডের ব্যাকলগে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ অপেক্ষা করছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের মতে, ২০১৮ সালের নভেম্বরে ৩৬ লাখের বেশি লোক পরিবারভিত্তিক অভিবাসনের অপেক্ষায় আছে। তাদের মধ্যে মার্কিন নাগরিকদের ভাই-বোন ক্যাটাগরিতে প্রায় ২২ লাখ, প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে ক্যাটাগরিতে প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজার ও ৪ লাখ ৭০ হাজার স্থায়ী নাগরিকের স্বামী বা ছোট বা প্রাপ্তবয়স্ক অবিবাহিত সন্তান রয়েছে। এদের বেশির ভাগই মেক্সিকো, ফিলিপাইন, ভারত, ভিয়েতনাম ও চীন থেকে আসা।
ধারণা করা হচ্ছে, এই আইন পাস হলে মূলত এসব দেশের পরিবারের আবেদনগুলো বাদ পড়ে যাবে। ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের (ইউএসসিআইএস) তথ্য অনুসারে, কর্মসংস্থানভিত্তিক দ্বিতীয় ও কর্মসংস্থানভিত্তিক তৃতীয় বিভাগে নির্ভরশীল ভারতীয় প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার প্রতি বছর ভারত থেকে আসে। পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকার বাইরের কর্মসংস্থানভিত্তিক গ্রিনকার্ডের জন্য হাজার হাজার ব্যক্তিগত আবেদন অপেক্ষা করছে।
বর্তমান আইনের আওতায় এইচ বি-১ ভিসার অবস্থা ছয় বছরের মেয়াদে থাকবে বা মেয়াদ শেষে নতুন ভিসা নবায়ন আবেদন করা যাবে। ভবিষ্যতের অবস্থান কি পেনডিং থাকবে নাকি এর নাম বদলে ‘বিল্ড আমেরিকা’ নামকরণ হবে—কিছুই এখনো স্পষ্ট নয়।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকার বাইরের কর্মসংস্থানভিত্তিক গ্রিনকার্ডের জন্য হাজার হাজার ব্যক্তিগত আবেদন অপেক্ষা করছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মনে করছে, মার্কিন নাগরিকদের সন্তানদের আবেদনপত্র আরও জটিল ও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
বর্তমান প্রশাসন প্রস্তাব করছে, মার্কিন নাগরিকদের স্বজনদের আর আত্মীয় হিসাবে স্বীকার করা হবে না—শিগগিরই এমন একটি নীতিমালা তৈরি জরুরি। আমেরিকা ড্রিমারদের স্বপ্ন রাজ্য হিসেবে পরিচিত। তাই আইনি সাহায্যের মাধ্যমে সর্বাধিক মানুষকে আমেরিকাতে স্বাগত জানানো উচিত এবং যারা এ দেশে আসার জন্য নিয়ম মেনে ধৈর্য ধরে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছে, তাদের আসতে দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন হোমল্যান্ড সিকিউরিটির অনেক কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারক।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *